বসুন্ধরার বিটুমিন আমদানিনির্ভরতা কমাবে
বসুন্ধরা বিটুমিন প্রকল্পের সব ধরনের বিটুমিন তৈরির সক্ষমতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথের (সওজ) কারিগরি সেবা বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মো. আবদুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, ‘দেশে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন বিটুমিনের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন উৎপাদন করে। বাকি বিটুমিন বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমার বিশ্বাস, বসুন্ধরা বিটুমিন প্রকল্প দেশের আমদানিনির্ভরতা কমাবে।’
গতকাল শনিবার কেরানীগঞ্জের পানগাঁওয়ে ৬৩ একর জমির ওপর নির্মিত বসুন্ধরা বিটুমিন প্রকল্প পরিদর্শন শেষে ওই প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ সড়ক ও গবেষণাগারের পরিচালক (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) মো. আহসান হাবিবসহ ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বসুন্ধরা বিটুমিন প্রকল্প পরিদর্শন করে।
এর আগে বসুন্ধরা বিটুমিন প্রকল্পের কর্মকর্তারা বেসরকারি খাতের দেশের প্রথম বিটুমিন প্রকল্পের উৎপাদনপ্রক্রিয়া, সক্ষমতা ও গুণগত মান প্রতিনিধিদলের সামনে তুলে ধরেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের নিবন্ধিত কম্পানি বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কম্পানি লিমিটেডের একটি ব্র্যান্ড বসুন্ধরা বিটুমিন। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রীসহ সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো আরো টেকসই করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে দেশের অন্যতম বড় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের প্রকল্প বসুন্ধরা বিটুমিন। উন্নত মানের বিটুমিন উৎপাদনের মাধ্যমে কমাবে বিদেশনির্ভরতা। এতে সাশ্রয় হবে সরকারের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।
তাঁরা আরো জানান, সড়ক নির্মাণে পিচ ঢালাইয়ের অন্যতম উপাদান বিটুমিন। পিচকে জমাট রেখে সড়ককে টেকসই করার বড় দায়িত্ব মানসম্মত বিটুমিনের।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী নাফিজ ইমতিয়াজ আলম বলেন, ‘২০১৭ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে বর্তমানে উৎপাদনের শেষ পর্যায়ে। বিটুমিনের নতুন নতুন পণ্য দেশের জন্য হাজির করবে বসুন্ধরা, যা আগে কখনো দেশে আসেনি। এ জন্য বিশেষায়িত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে চীনের একটি প্রতিষ্ঠান।’
তিনি আরো বলেন, ‘দেশে বছরে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টন বিটুমিনের চাহিদা থাকলেও বসুন্ধরা বিটুমিন প্রকল্পের ৯ লাখ টন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বাকি চার লাখ টন রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’
বসুুন্ধরা একটি বড় লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান আস্থার অভাবে হারিয়ে গেলেও বসুন্ধরা আস্থার সে সংকট কাটিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে এগিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠুক, এটা আমাদের উদ্দেশ্য। ২০৪১ সালে দেশের অবকাঠামো বর্তমান অবস্থা থেকে আরো তিন-চার গুণ বেড়ে যাবে। দেশীয় শিল্প হিসেবে বসুন্ধরা বিটুমিনকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে। এর জন্য কাঙ্ক্ষিত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।’
সড়ক ও গবেষণাগারের পরিচালক মো. আহসান হাবিব বলেন, ‘বিদেশ থেকে বিটুমিন আমদানি করা হলেও দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী না হওয়ায় সড়কে তা টেকসই হয় না। এ অবস্থায় বসুন্ধরা দেশের এই চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। একই সঙ্গে বসুন্ধরা বিটুমিন টেকসই সড়ক নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রকল্প পরিদর্শনের পর আমরা দেখেছি, বিটুমিনের গবেষণা ও উন্নয়নেও (আরঅ্যান্ডডি) কাজ করছে বসুন্ধরা। আমরা আশা করছি, দেশের বাইরেও বসুন্ধরা বিটুমিন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।’
বিটুমিন প্রকল্পের প্রধান মার্কেটিং কর্মকর্তা খন্দকার কিংশুক হোসেন বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখতে চায়। এর জন্য মানসম্মত বিটুমিন উৎপাদন করছে বসুন্ধরা। বর্তমানে দেশের সড়কগুলোয় অখ্যাত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমদানি করা বিটুমিন ব্যবহার করায় বছর না ঘুরতেই সড়ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই জায়গাটায় ভূমিকা রাখতে চায় বসুন্ধরা।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, চলতি নভেম্বরেই বাজারে আসবে বসুন্ধরার বিটুমিন। প্রাথমিকভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে তিন লাখ টন বিটুমিন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কম্পানির সহকারী মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. ফরহাদসহ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা।