বসুন্ধরার বিটুমিনে আস্থা রাখতে চাই
বসুন্ধরা গ্রুপের প্লান্টে উৎপাদিত বিটুমিনের মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রতিনিধিদল। আজ বুধবার কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরার বিটুমিন প্লান্ট পরিদর্শনে গিয়ে ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় টেকসই ও উন্নত সড়ক নির্মাণে জোর দিয়ে থাকেন। আমদানীকৃত নিম্নমানের বিটুমিনের কারণে সড়ক টেকসই হচ্ছিল না। এ অবস্থায় বসুন্ধরার মানসম্মত বিটুমিনের ওপর আস্থা রাখতে চাই।
এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশিদ খানের নেতৃত্বে একটি দল বুধবার দুপুরে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও এলাকায় বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট পরিদর্শনে যায়। এ সময় প্রকৌশলীদের সঙ্গে বিটুমিন উৎপাদনপ্রক্রিয়া, ধরন, উৎপাদনক্ষমতা, গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হয়। তাঁরা বসুন্ধরা বিটুমিনের কর্মপরিকল্পনা, কৌশলাদি ও উন্নতমানের উৎপাদনপ্রক্রিয়া দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। দেশকে উন্নতির চূড়ায় নিয়ে যেতে এই মহৎ উদ্যোগের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে সাধুবাদ জানান।
এ সময় এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশিদ খান বলেন, আমরা চাই দেশীয় কম্পানি বিটুমিন উৎপাদন করুক। এতে সময় ও খরচ দুটোই কমে আসবে। বিপণন সহজলভ্য করতে জেলা পর্যায়ে পৌঁছানোর আহ্বান জানান তিনি।
আমদানীকৃত বিটুমিনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে যে পরিমাণ বিটুমিন উৎপাদন হয়, তা বর্তমান চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ফলে আমদানিনির্ভরতা বেড়ে যায়। কিন্তু বিদেশ থেকে আমদানি করতে গিয়ে প্রক্রিয়াগত কারণে যে সময় ব্যয় হয়, এতে বিটুমিনের মান অনেকাংশেই কমে যায়। এ অবস্থায় বসুন্ধরার এই উদ্যোগ খুবই সময়োপযোগী। দেশে উৎপাদিত বিটুমিন টাটকা। ফলে মানও ঠিক থাকে।
তিনি বলেন, ‘মান নিয়ে কোনো আপস নেই। আমরা বসুন্ধরার বিটুমিনের মানের ওপর আস্থা রাখতে চাই। আশা করি, তারা এই আস্থা ধরে রাখবে। বসুন্ধরা ও এলজিইডি যৌথভাবে কাজ করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত টেকসই সড়ক উন্নয়নের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’
বিটুমিন গ্রেড নির্ধারণ কমিটির সভাপতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, বিটুমিন যেখান থেকেই আসুক, এর মান নিয়ে কোনো আপস করা চলবে না। বসুন্ধরা গ্রুপকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। কারণ, দেশের সড়ক উন্নয়নে বিরাট ঝুঁকি নিয়ে তারা এ প্লান্ট গড়ে তুলেছে। দেশীয় এ পণ্য বিদেশেও রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এলজিইডিকে অনুরোধ করব, বসুন্ধরার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠুক।
এলজিইডির মান নিয়ন্ত্রণ ইউনিটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, বাংলায় একটা প্রবাদ আছে- ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলে পরিচয়’। বসুন্ধরা বিটুমিন তার মান দিয়েই বাজার দখল করবে। এলজিইডি কখনো মানের সঙ্গে আপস করে না।
তিনি বলেন, বিটুমিন নিয়ে আমাদের ভালো অভিজ্ঞতা ছিল না। ইরানি, ইউএইর বিটুমিন বা নরমাল বিপিসির রিপ্যাকিং করার প্রবণতা বন্ধ হয়ে যাবে, যদি বসুন্ধরা বিটুমিন গুণগত মান বজায় রেখে সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারে। তাহলে এটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট বিষয় হবে। সরকারের বিটুমিনের যে চাহিদা, তার ৪০ শতাংশই ব্যবহার করে এলজিইডি। সুতরাং এলজিইডি বিরাট একটা স্টেকহোল্ডার হবে বা ইউজার হবে বিটুমিন ব্যবহার করার জন্য।
প্রতিনিধিদলের এক কর্মকর্তা বলেন, আসলে আজকে আমরা যে উদ্দেশ্যে এসেছি সেটা হলো, প্রত্যাশিত মানের বিটুমিন উৎপাদিত হয় কি না তা দেখার জন্য। আরেকটা হলো, ভেজাল বিটুমিন যাতে তৈরি না হয়। নিজের দেশে যদি বিটুমিন তৈরি করতে পারি, তাহলে ভেজাল বিটুমিন আমদানির প্রবণতা কমে আসবে। ভেজালবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে বসুন্ধরা যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা প্রশংসনীয়। এ জন্য বসুন্ধরাকে ধন্যবাদ জানাই।
বসুন্ধরা গ্রুপের সেক্টর বি-এর প্রধান বিপণন কর্মকর্তা কিংশুক হোসেন বলেন, বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারিভাবে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিটুমিন উৎপাদন শুরু করে বসুন্ধরা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও আমরা বিটুমিন রপ্তানি করতে পারব। বাংলাদেশ ইস্টার্ন রিফাইনারি যে পরিমাণ বিটুমিন উৎপাদন করে, তাতে দেশের চাহিদা পূরণ হয় না। কারণ চাহিদা অনেক বেশি। বসুন্ধরা প্লান্ট দেশে বিটুমিনের চাহিদা মেটাতে পুরোপুরি সক্ষম। যে প্রকল্পে যে ধরনের বিটুমিন প্রয়োজন তা উৎপাদনে সক্ষম বসুন্ধরার এ প্লান্ট। আমরা আশা করি, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়সহ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পারব।
উৎপাদন সক্ষমতা বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৯ লাখ টন। বর্তমানে দেশে ৫ লাখ টনের বেশি বিটুমিনের চাহিদা রয়েছে। আর এ মুহূর্তে বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্টে বার্ষিক উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ৫ লাখ টন। খুব শিগগির উৎপাদনে আরো ৪ লাখ টন যোগ হবে।
প্রতিনিধিদলের সামনে বসুন্ধরা বিটুমিনের সামগ্রিক উৎপাদন ও পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা প্রদান করেন বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কম্পানি লিমিটেডের প্লান্ট প্রধান ইঞ্জিনিয়ার নাফিজ ইমতিয়াজ আলম। প্রতিনিধিদলে এলজিইডির সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আলি আখতার হোসেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নূর হোসেন হাওলাদার, মান নিয়ন্ত্রণ শাখার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজাউল করিমসহ অন্য প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কম্পানি লিমিটেডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি বসুন্ধরা বিটুমিনের প্লান্টটি উদ্বোধন করা হয়। এটি বেসরকারি খাতে দেশের প্রথম ও একমাত্র বিটুমিন প্রস্তুতকারী প্লান্ট, যা অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত।